ঋতুপর্ণ ঘোষের নির্মাতৃত্বে “বাড়িওয়ালি” (২০০০) চলচ্চিত্রটি এক নিঃসঙ্গ মধ্যবয়সীা মহিলার জীবনের গল্প তুলে ধরে। বনলতা (কিরণ খের) নামের এই চরিত্রটির অতীত বেদনাদায়ক। কম বয়সে বিয়ের আগে হবু স্বামীর মৃত্যু তার মনে গভীর ক্ষত রেখে যায়। ফলে, সে আর কখনো বিয়ে করে না, নিজের দাসী মালতীর (সুদীপ্তা চক্রবর্তী) সাথে একাকী জীবনযাপন করে।
একটি টানে কিছুদিনের জন্য বনলতা তার বাড়িটি একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ সংস্থাকে ভাড়া দেয়। শুটিং চলাকালীন পরিচালক দীপনাকরের (চিরঞ্জিত চক্রবর্তী) সাথে তার একটা অনিচ্ছাকৃত মোহ তৈরি হয়। দীপনাকর ছবিতে একটি ছোট চরিত্রেও অভিনয় করছেন। কিন্তু শুটিং শেষ হয়ে গেলে পরিচালক ও কলাকুশলীরা চলে যান। বনলতা দীপনাকরকে চিঠি লেখেন কিন্তু কোনো জবাব পান না। এর চেয়ে বড়ো আঘাত, চূড়ান্ত সম্পাদনায় তার অভিনীত দৃশ্যই ছবি থেকে বাদ পড়ে যায়। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে বনলতা বুঝতে পারেন যে তার সরলতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাবের সুযোগ নেওয়া হয়েছে।
অভিনয় ও পরিচালনা:
- কিরণ খেরের অসাধারণ অভিনয়: বনলতার চরিত্রে কিরণ খের অসাধারণ অভিনয় করেছেন। একাকীত্ব, হতাশা, আশা – সবকিছুই তার অভিনয়ে ফুটে উঠেছে।
- ঋতুপর্ণ ঘোষের সু চিত্রায়ন: ঋতুপর্ণ ঘোষ একজন দক্ষ পরিচালক হিসেবে নিঃসঙ্গতা, প্রত্যাশার ভাঙন ও মানবিক স্পর্শের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন।
সম্মাননা ও বিতর্ক:
- এই ছবিটি কিরণ খেরকে সেরা অভিনেত্রী ও সুদীপ্তা চক্রবর্তীকে সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় পুরস্কার এনে দেয়।
- ঋতুপর্ণ ঘোষ “নেটপ্যাক পুরস্কার” জেতেন। যদিও জাতীয় পুরস্কার জেতার পরে, ঋতুপর্ণ ঘোষের বিরুদ্ধে বিতর্ক দেখা দেয় কারণ তিনি তার কণ্ঠে ছবিটি ডাব করেছিলেন কিনা, সে বিষয়ে।
বাড়িওয়ালি নিঃসঙ্গতা এক কাহিনী। এটি আমাদের একা মানুষের চাওয়া-পাওয়া, আঘাত, এবং মানবিক সম্পর্কের জটিলতা নিয়ে চিন্তা করতে বাধ্য করে।