কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে তেঁতুলিয়ায়

কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে তেঁতুলিয়ায় : একটি পূর্ণাঙ্গ গাইড

পঞ্চগড়ের পরিচিতি:

পঞ্চগড় জেলা বাংলাদেশের সর্বউত্তরের জেলা, এবং তিনদিকে ভারতীয় সীমান্তে বেষ্টিত। স্যার সিরিল রেডক্লিফ কর্তৃক নির্দেশিত এই জেলার সীমান্ত রেখা প্রচন্ড আঁকাবাঁকা। পঞ্চগড় জেলার তিনদিকেই রয়েছে পাশ্ববর্তী দেশ ভারত। হিমালয় কন্যা নামে পরিচিত এই জেলা থেকেই দেখা যায় পৃথিবীর তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা (৮৫৮৬ মি)। অনেকেই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার জন্য ইদানীং পঞ্চগড় যাচ্ছেন। গতবছর তেতুলিয়া ঢুকার ১০/১২ কি.মি. আগে থেকেই বাসে বসে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা শুরু করেছিলাম; প্রায় দুপুর ৩ টা পর্যন্ত এর রুপ ঝলকানি দিচ্ছিলো।

ভ্রমণের পরিকল্পনা এবং গাইড

কিভাবে যাবেন:

ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ে ট্রেন বা বাস দুইভাবেই যাওয়া যায়।

ট্রেন যাত্রা:

পঞ্চগড় স্টেশনের নাম বি সিরাজুল ইসলাম স্টেশন। ঢাকা থেকে তিনটা ট্রেন আসা-যাওয়া করে পঞ্চগড়ে।

  • পঞ্চগড় এক্সপ্রেস: ঢাকা থেকে ছাড়ার টাইম রাত ১০.৪৫, পঞ্চগড় পৌঁছায় সকাল ৯ টার দিকে।
  • দ্রুতযান এক্সপ্রেস: ঢাকা থেকে ছাড়ার টাইম রাত ৮:০০ টা , পঞ্চগড় পৌঁছায় সকাল ৬.১০ এর দিকে।
  • একতা এক্সপ্রেস: ঢাকা থেকে ছাড়ার টাইম সকাল ১০.১০, পঞ্চগড় পৌঁছায় রাত ৯ টার দিকে।

ভাড়া:

  • শোভন চেয়ার: ৫৫০ টাকা
  • স্নিগ্ধা: ১০৫৩ টাকা
  • এসি বার্থ: ১৮৯২ টাকা

বাস যাত্রা:

ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ে হানিফ, নাবিল, শ্যামলী সহ অনেক বাস চলে। ঢাকা থেকে সরাসরি তেতুলিয়ার বাসও আছে।

ভাড়া: ৬০০ থেকে ১০০০ টাকা (এসি/ননএসি মিলিয়ে)

পঞ্চগড় থেকে তেতুলিয়া:

তেতুলিয়ার বাস ছাড়ে পঞ্চগড় বাস টার্মিনালের পাশে ধাক্কামারা মোড় থেকে। ভাড়া: ৫০ টাকা। ভাগ্য ভালো হলে এশিয়ান হাইওয়ে ধরে যেতে যেতে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাবেন। এশিয়ান হাইওয়ে পুরাই মাখনের মতো একটা রাস্তা।

কী কী দেখবেন:

  1. তেতুলিয়া ডাকবাংলো এবং কাঞ্চনজঙ্ঘা ভিউ পয়েন্ট: তেতুলিয়া থেকে অটো ভ্যান ভাড়া নিয়ে চলে যাবেন ডাকবাংলো। ডাকবাংলোর পাশেই বয়ে গেছে মহানন্দা নদী। কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার সবচেয়ে ভালো জায়গা এখানেই। অক্টোবরের লাস্ট উইক থেকে নভেম্বরের মিড পর্যন্ত কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। ক্লোজ ভিউ পেতে হলে বাইনোকুলার নিয়ে যেতে হবে।
  2. কাজী এন্ড কাজী টি এস্টেট: ডাকবাংলো থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা শেষ করে অটো/ভ্যান নিয়ে চা বাগান দেখতে চলে যান। পঞ্চগড়ে চা বাগানের সূচনা করেন ড.নাজমুল হক স্যার। বিশাল জায়গা নিয়ে এই চা বাগান সমতল ভূমির চা বাগান হিসেবে খুবই সুন্দর।
  3. আনন্দধারা রিসোর্ট: চা বাগানের পাশেই এই রিসোর্ট। রিসোর্টের ভেতর ঘোড়া ঘুরে বেড়াচ্ছে, যা দেখতে চমৎকার লাগে। পারমিশন লাগবে এই রিসোর্টে ঢুকতে।
  4. বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট: তেতুলিয়া থেকে বাংলাবান্ধার দূরত্ব ২২ কিমি। এখান থেকে শিলিগুড়ি ১৩ কি.মি., গ্যাংটক ১৩৩ কি.মি.। বিকাল ৫ টায় পতাকা নামানোর সময় দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্যারেড উপভোগ করতে পারবেন।
  5. রকস মিউজিয়াম: শহরের মহিলা কলেজ প্রাঙ্গণে অবস্থিত। ১৯৯৭ সালে ড.নাজমুল হক স্যারের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে উন্মুক্ত ও অভ্যন্তরীণ গ্যালারিতে দুর্লভ সব পাথর দেখা যাবে।
  6. অন্য দর্শনীয় স্থানগুলো: প্রায় ৪০০ বছরের পুরোনো মির্জাপুর শাহী মসজিদ, ১৫০০ বছর আগে খনন করা মহারাজার দিঘী, এবং পাঁচটি গড়।

কোথায় থাকবেন:

তেতুলিয়া ডাকবাংলোতে থাকতে হলে আগে থেকে কনফার্ম করতে হয়। তেতুলিয়া, পঞ্চগড়ে মিড রেঞ্জের বেশ কিছু হোটেল আছে থাকার জন্য। কয়েকটি হোটেল:

  • হোটেল মৌচাক (পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া রোডে)
  • সেন্ট্রাল গেস্ট হাউজ (সিনেমা হল রোডে)
  • সীমান্তপাড় হোটেল (তেতুলিয়া চৌরাস্তা থেকে বায়ে)

খরচাপাতি:

ঢাকা থেকে ২৫০০-৩০০০ টাকায় ভালোভাবে ঘুরে আসা যাবে। বাজেট ট্রাভেলার হলে আরও কমে যাবে।


পরামর্শ এবং সতর্কতা:

  1. পরিবেশ নোংরা করবেন না।

শুভ এবং নিরাপদ হোক আপনার ভ্রমণ।

Spread the love

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *