শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটকের পথে সেভক ফরেস্টের মনোরম দৃশ্য

সিকিম ভ্রমন : দ্বিতীয় পর্ব গ্যাংটকের পথে

 ৬ নভেম্বর ২০১৯,

রমলা সেন এর শহরে

আমার কাছে ছুটির দিন মানেই পুরনো ভ্রমণকাহিনি রোমন্থন করা, সেরকম ই পাঁচ বছর আগের ভ্রমণকাহিনী আজ লিখতে বসেছি।এর আগের পর্বে আমরা সিকিম যাবার জন্য ঢাকা থেকে বাংলাবান্ধা এসেছিলাম ।

বাংলাবান্ধা পেরিয়ে নো ম্যনজ ল্যন্ড , এর পর গুটি গুটি পায়ে ঢুকে পড়লাম ভারতীয় সীমান্তে যার নাম ফুলবাড়ি । লোহার গেটটি পার হতেই যেন মনে হল একটা লাইন দুটো দেশকে ভাগ করেছে আলো বাতাস কে নয় । এপারে ঢুকে যাওয়া মানে ঢুকে যাওয়া নয়, কিছু কাজ শেষ করতে হবে আর তা হল ইমিগ্রেশন প্রসেস । সকাল সাড়ে নটায় ঢুকে বের হলাম সাড়ে দশটায় ,ইমিগ্রেশন শেষ।

একটা টোটো নিয়ে একটু এগিয়ে গেলেই ফুলবাড়ি মোড় । আমরা এগিয়ে যাচ্ছি , থেকে অই দুরে বাংলাদেশ। আমরা এখন ফুলবাড়ি মোড়। এখান থেকে যাব রমলা সেনের শহর শিলিগুড়ি। রমলা সেন কে যে সবাই চিনবে তা নয় আমি চিনি যখন শমরেশ মজুমদার এর সাতকাহন পড়েছিলাম তখন চা বাগানে দিপাবলির বাবার সাথে দেখা হয় সেই মহিলার । থাকতেন শিলিগুড়িতে এমনকি তার বাড়ি নাম্বারও দেওয়া ছিল । বেশ সাহসি থাকতেন পুরুষ বন্ধুর সাথে । যাই হোক এই শহরে ঢুকবার আগে বাইয়ের এই চরিত্রটির কথা মনে পরছিল তাই নাম দিয়েছি রমলা সেনের শহর ।

আমরা বেশ কজন ছিলাম, এখানে এসে মোড়ের এক হোটেল এ কিছু খাবার খেয়ে ইন্ডিয়ান  সিম নিয়ে শিলিগুড়ির উদ্দেশে আমরা  রওনা দিলাম । বেশ তপ্ত রোদ উঠেছে । নীল ঝকঝকে আকাশ যেন সচ্ছ নীল কাচের গায়ে তুলোর দলার অবিরাম ছুটাছুটি । এই রৌদ্রজ্জল ঝলমলে দুপুরে এবার একটা অটো ভাড়া করে ছুটে চলা শিলিগুড়ি বাস স্ট্যন্ড অভিমুখে ।

দুপুর দুটো আমরা এখন শিলিগুড়ি জংশন এর সামনে । এখান থেকেই জিপ নিয়ে আমাদের বেরিয়ে পড়া সেবক রোড হয়ে আমাদের গন্তব্যস্থল সিকিমের উদ্দেশ্যে  । দুপুরের তপ্ত রোদ জানান দিচ্ছে ঘেমে সবাই একাকার আমাদের ড্রাইভার গাড়ি ছেড়ে দিলে হাফ ছেড়ে বেচে রাস্তায় দূর দৃষ্টির প্রলেপ লাগিয়ে এগিয়ে চললাম ।

সেবক রোডে উঠবার আগে কোন এক স্কুল শেষে শিক্ষার্থীরা।

আমাদের গাড়ি চলতে লাগল। গালে হাল্কা একটা শীতল বাতাস বুঝলাম তপ্ত রোদের তেজ কমে গিয়েছে। আমার কানে এয়ারফোন গুজানো। গান শুনছি রুপম ইসলাম এর ফিরিয়ে দেওয়ার গান “ভেবেছিলাম তোকে পুড়িয়ে ফেলব আমি,……

আমার কাছে এমন ভিনদেশী রাস্তা পাহাড় আর নিরুত্তাপ বিকেল ভিষন প্রিয়। এমন গাছপালা চারদিকে আমার বাস্তবের ছবি একে যাবে আর আমি দেখব এটাই সব সময় কল্পনায় থাকে। এখন এটাই বাস্তব। এমন সব চিন্তার বাস্তব প্রতিফলনে চোখে পড়ল একটা বুনো হাতি তার মানে আমরা এখন সেভক ফরেস্ট পার হচ্ছি।

নির্জন সেভক ফরেস্ট

নির্জন সেভক রোড পেরোতেই বুঝতে আর বাকি নেই বেলা পড়ে আসছে। দূর পাহাড়ের বেকে চলা পথ অবলোকন করছি আর ভাবনার সাথে মিলমিশ হয়ে যাওয়া মনটাকে একটু একটু করে আনন্দের স্বাদ নিতে দেখছি। অনিন্দ্য সুন্দর ছাতীম গাছের গন্ধে যেন গোটা পরিবেশ একাকার। এ যেন এক অদ্ভুত রকমের ভাল লাগা।

রাস্তার পাশে এমন অসংখ্য ছাতিম গাছ সুবাস ছড়ায়

তিস্তার পাড় দিয়ে যাবার সময় চোখে পড়ল করোনেশন ব্রিজ তাই ঝটপট ফোন বের করে তুলে ফেললাম। হাওয়া এখন আরো শীতল বলে অনুভুত হচ্ছে।

আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা আজ আমায় নেমত্তন্ন করেছে বলে মনে হচ্ছে এর জাদুকরী সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধ করে রেখেছে। ধুসর কোন এক বিকেলে যদি নিজেকে হারায় তবে আজকের কথাই মনে করব।

তিস্তা

তিস্তার জাদুকরী রুপে মুগ্ধ হয়ে যখন এগোচ্ছি কালিম্পং কে ফেলে সামনের দিকে এগোতেই চোখে পড়ল এক রেস্তোরা। আমাদের ড্রাইভার কিছুক্ষণ এর জন্য গাড়ি রাখল পেটে প্রচুর ক্ষুধা। সবাই খাবার খেয়ে আবার বেরিয়ে পড়লাম। চলে এলাম রংপো তে। এই রংপোর নাম অনেক আগে পড়েছি যখন সত্যজিৎ রায়ের গ্যাংটকে গন্ডগোল পড়েছি। এখানেই আমাদের এন্ট্রি নিতে হবে। তারপর আর মোটে দু ঘন্টা তারপর আমাদের গন্তব্যস্থল।

তিস্তার পাড়ে কোন একটা গ্রাম

এরই মাঝে কত গ্রাম কত পাহাড় পেরোচ্ছি। সন্ধে ঘনিয়ে এসেছিল যখন। সাঝের বাতির মত দূর পাহাড়ের বাতিগুলো জ্বলেছিল।

নিশুতি রাত এসেছে। আমাদের গাড়ি চলছে অবিরাম। রাত আটটায় আমরা রংপো র সকল কাজ সেরে বেরিয়ে পড়েছি।

রংপো

আস্তে আস্তে আরো ঠান্ডা বাড়ল। গাড়ি এগোচ্ছেই। নাম না জানা কত রাস্তা পাহাড় পার হয়ে যাচ্ছি। কানে আমার গুজানো এয়ারফোন ফিরিয়ে দেবার গান আবার রিপিট হয়ে বাজছে। আমি জানালার বাইরে মাথা বের করে ঠান্ডা হাওয়ায় গানের সাথে তাল মিলিয়ে ঠোট মিলিয়ে মৃদু মাথা দুলিয়ে সায় দিয়ে গাই

এভাবে গাছপালার স্নেহ দিয়ে ঢাকা
থাক সে পথ ফাঁকা
থাক তোর ডাকে সাড়া দেবোনা, দেবোনা না না
শত বসন্তের আদরে যেই রেখেছি বালিশে ঘুম
হাত পাতার ভাজে রাখা আমার এই ভালোলাগা

সিকিম ভ্রমণ: প্রথম পর্ব লিঙ্ক

Spread the love

2 thoughts on “সিকিম ভ্রমন : দ্বিতীয় পর্ব গ্যাংটকের পথে”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *