বর্ষার মৌসুম সাথে অলস দুপুর একটা সিনেমা হয়ে যেতেই পারে। মেঘপাড়ায় আজকাল অনেক মেঘ, বৃষ্টি আসতে চাইছে ভাব, কিন্তু আসছে না। সারা শহর জুড়ে তোলপাড় চলছে কত্ত কিছু নিয়ে। আমি কফি হাতে ল্যাপটপটা খুলে বসেছি, জানালা খোলা, পর্দার ফাঁক দিয়ে হালকা বাতাস ঢুকছে।
আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু হলো কলকাতার বিখ্যাত সিনেমা “অন্তহীন”। কিছু ছবি যে আপনাকে এক অন্যরকম রিফ্রেশিং ভাব এনে দিতে পারে, এটা না দেখা অব্দি বিশ্বাস কম ছিল। ছবিটা আমায় প্রায় এক যুগ পিছিয়ে নিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু আজকের দিনের সাথেও ভারি সামঞ্জস্য রেখে।
একটু একটু অপেক্ষা করুন, কফিটা ঠান্ডা হয়ে আসছে। খেয়েই লিখছি।
“অন্তহীন” সিনেমার প্লট ও প্রেক্ষাপট
কলকাতার ছবি মানেই ট্রাম, টেলিফোন, ডাকপিয়ন, পুরনো এঁদো গলি, বৃষ্টির ফোঁটা, হলুদ ট্যাক্সির নান্দনিক উপস্থিতি। তবে এ সিনেমায় যুক্ত ছিল বাটনওয়ালা মোবাইল ফোন এবং কম মেমোরির ল্যাপটপ। ছবিতে নায়ক একজন পুলিশ এবং নায়িকা একজন সাংবাদিক। ফেসবুক বা কোন সামাজিক মাধ্যম না থাকায় তখনকার দিনে মাই জোনের সেকেলে চ্যাট বক্সে সুন্দর সুন্দর কথোপকথন চলত তাদের। তারা দুজনেই ছিলেন অপরিচিত।
এক কথোপকথনে নায়িকা বলেই দিলেন, “আসলে আমরা যাকে চিনি না তার সাথে কথা বলতে বলতে অকপটে সব কিছু বলে দেই, সব শেয়ার করি, কারণ এতে অন্য চিন্তার কিছু থাকে না।” এ ছবিতে আমি একথায় একমত। আমরা যখন অনলাইনে অনেক বেশি কথোপকথন করি এবং সম্পর্ক ভালো দিকে নেয়, তখন এগুলো সারাদিন মাথায় ঘোরে, অনেকটা নতুন প্রেমে পড়বার মত।
স্নিগ্ধতার ব্যাখ্যা
আপনাকে যদি বলা হয় স্নিগ্ধতা কি? কী জবাব দেবেন? কখনও খুব খেয়াল করে ভেবেছেন? নায়িকা তার এক পৌঢ় সহকর্মীকে বললেন, “দিদি, আজকে তোমায় অনেক স্নিগ্ধ লাগছে।” সেখানে সেই সহকর্মী উত্তর দিলেন, “স্নিগ্ধ মানে জানিস?” আমার কাছেও স্নিগ্ধতার একটা মানে আছে। আমার কাছে স্নিগ্ধতা হল বর্ষার বৃষ্টিতে গাছের পাতা বৃষ্টি পড়ার পর বৃষ্টি থেমে গেলে হালকা হাওয়ায় দুলানো সতেজ পাতা।
সম্পর্কের গভীরতা ও মানে
হঠাৎ ছবি চলতে চলতে একটা কথা কর্নকুহরে মৃদু আঘাত করল, তা হল পৃথিবীতে আদর্শ সম্পর্ক বলতে কিছু নেই। যেহেতু আমি অবিবাহিত, তারপরও যখন বিবাহিত জীবন নিয়ে কিছু শুনি বা পড়ি, মনোযোগ একেবারে বাদ যায় না—হা হা। যাই হোক, আমার কফিটা শেষ।
আসলেই বিবাহিত জীবন মানে সুখী দাম্পত্য জীবনের শর্ত হল কম্প্রোমাইজ করা। বেশ লেগেছে লাইনটা। “আমাদের সবারই মাঝে মাঝে অনেক দূরে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে কিন্তু আমরা পারি কি?” একই রকম প্রশ্ন জুড়েছিল সিনেমার নায়িকা নায়ককে। উত্তরে নায়ক বলেছে, “পারি না কারণ পিছুটান থাকে। আসলেই আমাদের সবারই একটা পিছুটান থাকে, একেকজনেরটা একেক।”
একাকিত্ব বনাম একা থাকা
আমরা মাঝে মাঝে ভাবি আমরা বড় একা। আসলে কি তাই? উত্তরটা ছিল এমন, “আসলে একা বলতে কিছু হয় না, মানুষ একা ভাবতে ভালোবাসেন।” একা আর একাকিত্ব এক নয়। একাকিত্ব অর্জন করতে হয়। এ লাইনটা আমার মাথার উপর দিয়ে গেছে।
“অন্তহীন” এর মানে
আচ্ছা, অন্তহীন মানে কি? এই যেমন অন্তহীন অপেক্ষা? না শেষ হওয়া অপেক্ষা? আসলে তাই যদি হয়, নায়িকা সেটা নায়ককে বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন। হয়ত পুরোনো ল্যাপটপটা স্পর্শ করে অতীত ভালবাসাটা বোঝাও অনেক মর্মস্পর্শী ব্যাপার।
উপসংহার
বর্ষার দুপুরে “অন্তহীন” সিনেমা আপনাকে নিয়ে যাবে এক অন্যরকম অনুভবের জগতে। পুরনো দিনের স্মৃতির সাথে নতুন দিনের অনুভূতি মিলে মিশে এক অদ্ভুত মায়ার সৃষ্টি করবে, যা আপনার মনকে স্নিগ্ধ করে তুলবে।