চাঁদের পাহাড় রিভিউ: প্রথম পড়া বইয়ের স্মৃতিচারণা

১. বইয়ের প্রতি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা

জীবনে প্রথম যে বইটি আমাকে মুগ্ধ করেছে, তা হলো ‘চাঁদের পাহাড়’। ক্লাসিক বইয়ের প্রশংসা করা প্রায়শই একটি পরিচিত ব্যাপার হলেও, এই বইটির ক্ষেত্রে আমি একটু অন্যভাবে অনুভব করি। কারণ, এটি শুধুমাত্র একটি বই নয়, বরং আমার বই পড়ার প্রতি যে আগ্রহ, তার জন্মদাতা।

‘চাঁদের পাহাড়’ পড়ার পর, আমি বহু অ্যাডভেঞ্চারধর্মী বই পড়েছি, বাংলায়, ইংরেজিতে, এমনকি স্প্যানিশেও। কিন্তু আজও আফ্রিকা নিয়ে কিছু পড়লেই প্রথমেই মনে পড়ে শঙ্করের কথা। মনে হয়, চিরকালই মনে পড়বে।বুদ্ধদেব গুহ নিজেও আফ্রিকা ভ্রমণ করে বহু উপন্যাস লিখেছেন। তবুও তিনি বলেছিলেন, “বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় তো একবারও না এসেই ‘চাঁদের পাহাড়’ লিখেছিলেন। তুমি কি পঞ্চাশবার এখানে এসেও একটি ঐ রকম বই লিখতে পারবে?”।

২.বইয়ের কাহিনী

শঙ্কর, একজন নিম্ন-মধ্যবিত্ত বাঙালি যুবক, যার বাবার অসুস্থতার কারণে সংসারের দায়িত্ব তার কাঁধে এসে পড়ে। চাকরির সন্ধানে এবং স্বপ্ন পূরণের উদ্দেশ্যে সে আফ্রিকায় যায় মজুর হিসেবে কাজ করতে। সেখানেই তার দেখা হয় ডিয়েগো আলভারেজ নামের এক পর্তুগিজ প্রোসপেক্টরের সঙ্গে। এরপর তারা বেরিয়ে পড়ে রুয়েনজোরি পর্বতমালায় হীরের সন্ধানে।

উইকিপিডিয়া থেকে সংগৃহীত

গল্পের সবথেকে আকর্ষণীয় দিক হলো এর বাস্তবসম্মততা। বিভূতিভূষণের লেখনী এবং যথাযথ তথ্যের প্রয়োগ গল্পটিকে আরও জীবন্ত করে তুলেছে। রিখটার্সভেল্ডের সেই হাড়-হিম করা একাকিত্বের দৃশ্যপট আজও আমার মনের গভীরে গেঁথে আছে।
শঙ্করের গল্পটি আমাদের সবারই পরিচিত। অনেকটা El Dorado-এর সন্ধানে ভবঘুরে প্রোসপেক্টরদের মতন, কিন্তু এখানে শঙ্কর একজন নিম্ন-মধ্যবিত্ত বাঙালি যুবক, যার উপর তার অসুস্থ বাবার কারণে পরিবার সামলানোর দায়িত্ব এসে পড়ে। চাকরির সন্ধানে এবং একই সাথে স্বপ্ন পূরণের আশায় সে আফ্রিকায় যায় মজুর হিসেবে কাজ করতে। ঘটনাচক্রে তার দেখা হয় ডিয়েগো আলভারেজ নামের এক পর্তুগিজ প্রোসপেক্টরের সাথে, এবং তারা বেরিয়ে পড়ে রুয়েনজোরি পর্বতমালায় হীরার সন্ধানে। শঙ্কর একবারও ভাবে না যে সে একেবারেই এই ধরনের কাজে অদক্ষ।শঙ্করের সংগ্রাম

এরপর শুরু হয় শঙ্করের জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে ছিনিমিনি খেলা। শঙ্কর ঐ দুর্গম অঞ্চল থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে, এবং তার এই সংগ্রামের কাহিনীই হল ‘চাঁদের পাহাড়’। গল্পটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো এর বাস্তবসম্মত ঘটনা। বিভূতিভূষণের লেখনীর গভীরতা এবং যথাযথ তথ্যের প্রয়োগ গল্পটিকে আরও জীবন্ত করে তুলেছে।.

৩.বাস্তবতার ছোঁয়া

গল্পটি পড়তে পড়তে মাঝেমধ্যে Yossi Ghinsberg-এর আত্মজীবনী মনে পড়তে বাধ্য। রিখটার্সভেল্ডের সেই হাড়-হিম করা একাকিত্বের বিবরণ আজও আমার মনের গভীরে আঁকা আছে। বিভূতিভূষণের লেখনী এবং তথ্যের সঠিক প্রয়োগ বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।

কেন পড়বেন এই বইটি?

যে কোনো বাঙালি বইপ্রেমীর কাছে এটি একটি ঘরোয়া বই। তবে, যাদের এই বইটির সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই, তাদের বলব, সিনেমা দেখে বইয়ের সম্পর্কে অনুমান করবেন না। বইটি এমনভাবে লেখা হয়েছে যে এটি সকলেরই বোধগম্য হবে। সুতরাং, যারা এখনো পড়েননি, তাদের জন্য এটি একটি অবশ্যপাঠ্য।.

৫.পরিশেষে

‘চাঁদের পাহাড়’ শুধু একটি রোমাঞ্চকর উপন্যাস নয়, বরং এটি একটি আবেগঘন যাত্রা। শঙ্করের স্বপ্ন পূরণের কাহিনী এবং বিভূতিভূষণের অসাধারণ লেখনী এই বইটিকে অনন্য করে তুলেছে। তাই, যদি এখনো না পড়ে থাকেন, তবে আজই পড়ে দেখুন।

এই রিভিউটি পড়ার পর যদি আপনি ‘চাঁদের পাহাড়’ পড়ার আগ্রহ অনুভব করেন, তবে আমি নিশ্চিত যে এটি আপনারও প্রিয় বইয়ের তালিকায় জায়গা করে নেবে।

Spread the love

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *