মেঘালয় ভ্রমণ- এ যেন মেঘপিওনের মেঘালয় -১ম পর্ব

ট্রনে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল, চোখ খুলতেই আচ করলাম ঠান্ডা দমকা বাতাসের শীতল শিহরন, সারা গায়ে পশমগুলো তাদের শীরদাড়া দাড় করিয়ে করে দাঁড়িয়ে গেছে। ধরিত্রীর বুকে কি শীতল ছোয়া সাথে মৃদু বৃষ্টির হালকা ছিটে ফোটা চোখে মুখে এসে বাড়ি খাচ্ছে এমন নির্মল প্রশান্তির ক্ষন খুব কম সময় ই পাওয়া যায়।এবার কিন্তু এর ব্যপ্তিকাল বেশ বড় ছিল।সেই ভোররাত থেকে সারা দুপুর। সিলেট স্টেশনে এসে ট্রেন দাড়ালো,নেমে পড়লাম বেশ গোছালো স্টেশনটা তবে সারা রাতের বর্ষনে বর্ষিত পানি প্লাটফর্ম গুলো কে ছুবার নেশায় মেতে আছে। ট্রেন থেকে নেমে পিঠের ব্যাগ হাতে করে প্লাটফর্ম ছেড়ে বের হয়ে পড়লাম ভোর সাড়ে পাচটা।  সিএনজি যোগে সকালের নাস্তা করতে বেরিয়ে পড়লাম এখানকার সুপরিচিত হোটেল পানশিতে।এখানে এসে যেটা বুজলাম আমরাই প্রথম কাস্টমার যাই হোক হোটেলের লোক রা সাফ জানিয়ে দিল সকাল ৬ টার আগে আর খাবার পাচ্ছি না।  শেষমেশ নিজেরা ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে কিছুখন বিশ্রাম নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম এবার উদ্দেশ্য তামাবিল স্থলবন্দর কিন্তু হোটেল থেকে বের হতেই ঘন কালো মেঘের রঙ প্রকৃতিকে জানান দিচ্ছে আজ বাদল বেশ ঘটা করেই হবে। যাচ্ছি মেঘালয় ভ্রমন এ এ বৃষ্টি আরো সুন্দরভাবে উপভোগ করতে ।

যেমন টা ভাবা হয়েছিল তেমনটাই ঘটল  অল্প অল্প করে  তা হল মুষলধারে বৃষ্টি । কোন রকমে বাসে উঠবার পর যেন একটা শান্তি । এত বৃষ্টিতে সামনের লোক দেখায় মুসকিল হয়ে পড়েছিল।গোটা বাসে মোটে চার থেকে পাচ জন যাত্রি । বাইরে তুমুল বর্ষন এই বুঝি বাসের জানালার কাচ ভেঙ্গে বৃষ্টি ঢুকে পড়ে । কাচের জানালার তাকালে  এ যেন  যেন স্রোতস্বিনী নদি কাচের জানাল্য স্রোত বেয়ে চলেছে  বাইরে কিছু দেখা যাচ্ছে না । গা থেকে হাল্কা ভেজা কাপড় গুলো খুলে শুকনো কাপড় পরে ফেললাম। সাই সাই গতিতে বাস এগিয়ে চলছে বাইরের পরিবেশ বেশ থমথমে কালো মেঘের সাথে বৃষ্টি আর মেঘের গর্জন । কতদিন হল এমন বর্ষণ দেখি না । বর্ষা বাদলের একটা সুন্দর গন্ধ আছে প্রচন্ড বৃষ্টিতে এটা পাওয়া যায় । আমি যাচ্ছি মেঘের দেশ মেঘালয়ে  শুধু মেঘ বৃষ্টির রুপ দেখব ভেজা প্রকৃতির গন্ধ নিব আর  সারাদিন বর্ষা উপভোগ করব । রাস্তার দুপাশে ছোট ছোট খাল বিল আর ফাকা মাঠ মাঝখানে প্রবল বর্ষণে ছুটে চলা বাস । যেমন টা ভাবা হয়েছিল তেমনটাই ঘটল।

হেল্পার ডেকে উঠল এই বর্ডার বর্ডার । নেমে পরলাম । একটা স্নিগ্ধ সকাল ঝুম বৃষ্টি এখোনো আছে কখনো ভারি কখনও পাতলা তবে থেমে যাচ্ছে না । আশেপাশে ব্যঙ্গের গান শুরু হয়ে গিয়ছে , সকাল আটটা এখনও ইমিগ্রেশন অফিস খুলে নাই ব্যগপত্তর রেখে একটা দোকানের সামনে দাড়িয়েছি হঠাৎ  একটা  পাহাড় চখে পড়ল  মেঘগুলি পরম মমতায় পাহাড়টিকে জড়িয়ে রেখেছে । আহা এমন মেঘের খেলা খুব কম দেখেছি । এমন বর্ষাস্নাত পাহাড় দেখে বুকের ভেতর টা অনেক প্রসস্ত হয়ে গিয়েছে মনে হচ্ছে গোটা পাহাড় আমার বুকের মাঝে অবস্থান করছে। আমার পাগল মন প্রকৃতি পেলে যেন সব পেয়ে যায় চোখ বন্ধ করে একবার ভাবতে ইচ্ছে হল আমি ঐ পাহাড়ের চূড়ায় আমার পাশে মেঘগুল ঘুরছে একটা সময় আস্তে আস্তে করে পাহাড়টাও ঘুরছে ।

মস্তিষ্কের ছোট খাট শিথিলায়নের পর মনে হল বেশ সময় হয়ে গিয়েছে হাতের ঘড়িতে নয়টা। ইমিগ্রেশন অফিস ঢুকবার মত অবস্থা নেই এ তুমুল বর্ষনে তারপর আধোভেজা অবস্থায় ছাতা হাতে ঢুকে পড়লাম, ইমিগ্রেশন অফিসার বেশ মিষ্টি অভিবাদন বললেন বেশ ভাল সময়ে যাচ্ছেন এত সুন্দর প্রকৃতি দেখছেন ই এখানে কেমন আশা করি সুন্দর একটা ভ্রমন হবে আপনার।অবশেষে  বাংলায় ইমিগ্রেশন শেষ করে কয়েক ধাপ পেরোবো তাতেই আবার যেন বিপত্তি।

Spread the love

1 thought on “মেঘালয় ভ্রমণ- এ যেন মেঘপিওনের মেঘালয় -১ম পর্ব”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *