সিকিম ভ্রমণ: প্রথম পর্ব -ঢাকা  থেকে থেকে হিমালয় কন্যা বাংলাবান্ধা,পঞ্চগড়

হিমালয় কন্যা ও আমার সকাল

সাদা আভায় মোড়ানো সকাল। শীতের প্রকোপ যে কম তা কিন্তু নয়। ট্রেনের জানালা খুলতেই যেন কনকনে শীতের হাওয়া গোটা মুখটাকে গিলে ফেলবার মত অবস্থা। এটা সবে মাত্র নভেম্বর পড়েছে তাতেই যেন হিমালয় কন্যার দেশে সকালের শীত হামলিয়ে পড়েছে । ঘড়ির কাটায় সকাল ৭ টা ৩০ আমরা আর কিছুক্ষন এর মধ্য পৌছে যাব হিমালয় কন্যা পঞ্চগড় এ। যেহেতু ঢাকা থেকে সিকিম হিমালয় যাবার আশা করে বেরিয়েছি তাই ব্যাগে রাখা শীতের কাপড় এই হিমালয় কন্যার দেশেই অল্প হলেও পরতে হল। খানিক দুর এগোতেই একটা ছোট্ট স্টেশন নাম কিসমত।এই কিসমত এর পর আমাদের কিসমতের স্টেশন নাম বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রেলওয়ে স্টেশন। ট্রেনের হুইসেল কর্নকুহরে পৌছাতেই যেন আনন্দের এর বার্তা পেয়ে গেলাম যে আমরা এখন হিমালয় কন্য পঞ্চগড়।

শীত আসবার আগে যেন এখানে আগাম বার্তা, যে কদিনবাদে শীত আসছে। উত্তরের হাওয়া ঠিক এমনি, রেলের পাশের খেজুরের পাতাগুলো কেমনজানি এখনি নুয়ে পড়েছে মাঘ আসতে যে ঢের আরো দু মাস বাকি এ বুঝি খেয়াল হারিয়ে ফেলেছে। স্টেশন থেকে নেমে ভ্যান যোগে বাংলাবান্ধার বাসস্ট্যান্ডে বাসের উদ্দেশ্য যাওয়া শুরু।

কিসমত রেলওয়ে স্টেশন

উত্তরের প্রতিটি শহর বা গ্রামের আলাদা একটা রুপ আছে আছে সুন্দর একটা আবেগ যে আবেগে আপনাকে সে পটিয়ে ফেলতে ওস্তাদ। আমি উত্তরের ছেলে,আর হ্যা, আমার বাড়ি পাহাড় কিংবা সাগরে নয় কিন্তু আমার উত্তরের প্রকৃতির আমায় আলাদা রুপে আগলিয়ে রেখেছে, তাই এই রুপ যখন সামনে এসে দাড়ায় আমি বিমোহিত হয়ে যাই। এখানে রাস্তার পাশে লতা কলমিরও একটা নিজেস্ব গন্ধ আছে যে গন্ধ নাসারন্ধ্র এ প্রবেশ করলে যুগ যুগান্তরের আপন বলে মনে হয়। ছোট্ট বেলায় স্কুলে যেতাম তখন এই লতা কলমির গন্ধ আপনা আপনি নাকে এসে ঢুকে পড়ত। আজ ইট কাঠ পাথরের নগরীতে থেকে অনেকটা ভুলে যাবার উপক্রম বললেই চলে। যখন বাসে জানালার পাশে বসে এই গন্ধ পাচ্ছি নিজের অজান্তে কখন যে সেই দুরন্ত শৈশবে চলে গিয়েছি তা বেমালুম ভুলে গিয়েছি।

সাই সাই আওয়াজে বাস চলছে উদ্দেশ্য বাংলাবান্ধা। আমি জানালার পাশে আর আমার সিটখানা নেহাত ই ছোট চাপাচাপি করে কোনো রকমে বসবার খানিকক্ষণ বাদে রোদের ত্যাজ আচ করলাম। এ যেন ভীসন তাপ নিয়ে দপ দপ করে বেড়ে ওঠা শিশু থেকে যুবক । পাশের এক ষাটোর্ধ চাচা বললেন” রাতত খুবে শীত আর দিনত হাইরে গরম”। রোদ দেখে এটাই ছিল চাচার অভিব্যক্তি। জানালার কাচ সরিয়ে দিতেই নির্মল বাতাস যেন চুল আর মুখ ছুয়ে দেয়। মাঠ কে মাঠ আবাদি জমিতে ধান, কদিন বাদেই যে নবান্ন সোনালি ধানগাছ দেখলেই আচ করা যায়।এদিকের নবান্ন মানেই আমার সেই ছোট্টোবেলার নবান্নের কথা মনে পড়ে গেল। নতুন ধানের চাল, নারিকেল আর খেজুর গুড় দিয়ে বানানো ক্ষির।এই নির্জন গ্রামগুলো আর সহজ সরল মানুষগুলো দেখলে উত্তরের গ্রামীণ জনপদ সম্পর্কে আলাদা একটা গ্রামিন রুপ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হওয়া যায়।

তেতুলিয়া বাজার

আর ত্রিশ মিনিটের মধেয় পৌঁছে যাব বাংলাবান্ধা। দেখতে দেখতে চলে এলাম তেতুলিয়া। এই জায়গাটা আমার কেনজানি খুব আপন আপন লাগে। সুন্দর একটা মফস্বল শহর। এখানে বাস থামাতেই চা খেয়ে নিলাম ফার্স্ট ক্লাস একটা লবন চা। এখানে অনেক চা বাগান আছে যেগুলি সমতল এর চা বাগান।সমতলের চা বাগান নিয়ে অনেক গল্প উপন্যাস পড়েছি তাই যখন ই এই সমতলের চা বাগান দেখি তখনি এই মানুষগুলো নিয়ে লেখা চরিত্র সামনে ভেসে ওঠে। মনে হয় সেই মানুষগুলোকে এখানে দেখতে পাচ্ছি। সেই সমরেশ বাবুর বইয়ের মদেশিয়া, চা বাগানের গান সব কিছু মনে পড়ে যায়। যদিও চার মাস আগে এসেছিলাম তখন দার্জিলিং যাব বলে এ শহর ঘোরা হয় নি। পাচ বছর আগে একবার ঘুরতে এসেছিলাম তখন ঘুরেছিলাম এই সুন্দর মফস্বল শহরটি। সেবার পুর্নিমার চাদ ছিল, ডাকবাংলোর পুরাতন বড় বড় গাছ ছিল আর সাথে ছিল মহানন্দার কলতান। আবার বাস ছেড়ে দেয়ায় চলছি দেশের শুরুর প্রান্তে।

অবশেষে পৌছলাম বাংলাবান্দা জিরো পয়েন্টে।এখান থেকেই শুরু আমার প্রিয় মাতৃভূমি। ইমিগ্রেশন শেষ করে ছুটে চলতে শুরু করলাম পাশের দেশ ভারতে। যেহেতু সিকিম যাচ্ছি তাই এর পরের গন্তব্যস্থল রমলা সেনের শহর শিলিগুড়ি। কি ভাবছেন সিকিমনামায় সিকিম কই? পরের পর্বে আমরা রমলা সেনের শহর হয়ে সেবক রোড হয়ে তিস্তার পাড় দিয়ে যাব সিকিম তারপর শুরু হবে গ্যংটকে গন্ডগোল ।

পরের পর্বে থাকছে -রমলা সেনের শহরে

(যেখানেই যান দয়া করে চিপ্স, পলেথিন, বিভিন্ন পন্যের মোড়ক, ময়লা ফেলবেন না। ইহা দেখলে গায়ে কাটা দিয়ে ওঠে। এই পরিবেশ আমার আপনার সবার, সবাই কে বিনিত অনুরোধ কেউ এমন ময়লা ফেললে তাকে পরিস্কার পরিবেশ সম্পর্কে জানান। আর হ্যা পারলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য গাছ লাগান)

(৬-১১-২০১৯)

Spread the love

1 thought on “সিকিম ভ্রমণ: প্রথম পর্ব -ঢাকা  থেকে থেকে হিমালয় কন্যা বাংলাবান্ধা,পঞ্চগড়”

  1. Pingback: সিকিম ভ্রমণ: দ্বিতীয় পর্ব – গ্যাংটকের পথে

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *